জলের শিয়রে
মণ্ডলাকার এই গৃহে এসে যে সুবিধা হল বিলক্ষণ বুঝি ৷ নির্বাচিত গুচ্ছ নিয়ে বসে আছি ৷ প্রস্ফুটিত
মুখের দিকে তাকিয়ে আছে পাঠক ৷
একটা ধরাশায়ী রঙের আলোর দিকে ছুটে বেড়াচ্ছে মন ৷ শ্বেতাভ কন্যার কাছে রূপার্থ বেদনা লুকিয়ে রেখে কী প্রাণান্ত মণীন্দ্রসাধন !
কালীকৃষ্ণ-আলোকে পূর্ণ নিশীথিনী…
শেষাবধি মহারানা, জলের শিয়রে দেখি : খণ্ড চাঁদ,
বিজনরঙের ঢেউয়ে দোল খায় আদিগন্ত কবিতাশরীর…
দ্বিতীয় পাঠের পর
আজকাল সবকিছুতেই “জয়ন্ত, জয়ন্ত…” বলে
মতিভ্রম ঘটেছে আমার ৷ ভ্রমণের ইয়ত্তা নেই
তবু সে-অদৃশ্যগোচর
মতামতে সিদ্ধহস্ত ৷ হস্তরেখা, কবচ-কুণ্ডলী ৷
অপারগ হয়ে বলি — ভাগ্যে তোর কিছু নাই ৷
যাও,যাও : সেই তো জয়ন্ত… যত নিম্নভূমি জলরেখা… সুরম্য প্রাসাদ…
ক্যানভাসে ভ্রমণের ইচ্ছেগুলি ঘুরে-ফিরে ধ্রুব ৷
দ্বিতীয় পাঠের পর জলৌকা, মানে হয় ? স্নায়ুতন্ত্রে
ঘোর উজ্জীবন ৷অথচ কিয়ৎক্ষণ উজ্জয়নী,
পাঠক সমীপে এসে শান্ত হই ৷ সে-এক দুর্দৈব রহস্য—
বন্দিঘরে অনন্ত লগডাউন, তথাপি জয়ন্ত…
দ্বিতীয় পাঠের পর তৃতীয়ভুবন দেখি — করুণশঙ্খে মিশে যায়…
শপথ
সেই যে পথের ধারে রানিবেশে শেষবার দেখা !
ভুলে গেলে পুষ্পরাগ — এরই মধ্যে বেদনানিঝুম ?
ভাবি, এই মধ্যরাতে তোমার কপালে কুমকুম
উদিত সূর্যের মতো — ভোরের প্রথম রূপরেখা ৷
স্বপ্নে এই হয় ৷ জয় অচিরাৎ ৷ চিরাগের আলো
বিরহ মানে না ৷ঘুম, ঘরের ভিতরে ঘুলঘুলি…
নীরবে সাজিয়ে রাখে অন্ধকার, প্রিয় ভুলগুলি ৷
একটি মুহূর্ত কবে মুখ তুলে বলেছিল, ভালো ৷
মনে পড়ে পুষ্পরাগ, রানিবেশ, সে-পথের ধার…
সবই আছে ৷কিন্তু খোলেনি আজও শপথের দ্বার ৷
আন্দাজ
সকলই আন্দাজ, প্রিয় ৷ আর কত তির-তিরন্দাজ
অপেক্ষা সইব ? পাতা, মনে-মনে সাজাই অক্ষর ৷
অনুপুঙ্খ উন্মাদনা-সম্পাদনা লক্ষ্য করে আজ
অদৃশ্য বন্ধনটিকে ছিঁড়ে ফেলি নিজের ভিতর ৷
হয়তো সে-কৌতূহল সেতুটিকে গড়ে দেবে ঠিক ৷
একান্ত যৌতুক, তুমি আদিগন্ত কৌতুকের বশে
আমাকে ফেরাবে ৷ লাস্য ৷ অত:পর অদ্ভুত প্রেমিক
অপূর্ব কবিতা হয়ে দেখা দেবে চন্দ্রাহত-দোষে ৷
সকলই আন্দাজ, প্রিয় ৷ কী করে বলবো তাকে ভাণ !
আমাকে ডেকেছে তীর — নদী ওই মাসুদুজ্জামান ৷
খুশি, খুশি…
খুশি, খুশি — তুমি যে মুহূর্তে শিখা সহজেই বুঝি ৷
দীর্ঘ অদর্শনে শীতলতা — এই শীত নিয়ে এল খুব ৷
তোমাকে কল্পনা করে কিছু লেখা— সাধ্যাতীত পুঁজি
আমার যে নেই, জানো, বাগিচায় গোলাপের রূপ
শিশিরের মুগ্ধতায় উদ্ভাসিত — কাঁটার প্রণয়…
রৌদ্র জানে, ছায়া জানে — আর সেই শিহরিত হাওয়া
তাপের প্রবাহে আজও উজ্জ্বীবিত — তা ভোলার নয়
শৈত্য-বৈপরিত্য ভুলে, সুরোত্তম—এই চাওয়া-পাওয়া ৷
খুশি, খুশি — আসলে সে-অভিপ্রায়, ব্যথার নিবিড়
দীপের সামনে স্থির — আলোকিত মূক-উচ্চারণ
শিখায় আনত, ওই অন্ধকার, তারাদের ভিড়
ইশারায় ডাকে, ঈশা — স্পর্শাতুর শতভিষা-মন
এখনও হারায় — শৈত্যে, দ্বৈতা-ভাবে, দয়িতা-আঁধারে…
তুমি কি আসবে এই পাতা-ঝরা বৃক্ষটির দ্বারে ?