মধ্যরাতের সুরবালা

মাঝরাতের পাখিরা উড়ে যায় দূর আকাশে
বাল্যবন্ধুর মতো শুভ্র জ্যোৎস্না
চিনিয়ে দেয় ঘরে ফেরার পথ।
বাতাসে ভর করে জলকাদার ঘ্রাণ
নদীতে জলের প্রসূন আজ
তৃষ্ণায় বুক ফেটে যায়
হায়রে গন্ধকুসুম।

বহমান নদীর দিকে তাকাই জল ঝরার শব্দে সুরবালার ঘুম ভাঙে।
আমার গোপন পাপগুলো শুষে নেয়— মধ্যরাতের জলধারা।
মাটির শরীর হেঁটে যায় পূবের দিক
আদি শয্যা শ্মশান ঘাটে পুড়তে থাকে সাধের শরীর।
গহীন অঙ্গারে ক্রোধের জ্বালা জ্বলে।

সুরবালার মাঝরাতের কান্নায়—
ভোজবাতির মতো ঝিনুকের মুখ খুলে যায়।

 

জলরংয়ের ইডিপাস

অনিশ্চিত এই ধূসর কক্ষপথে ফিরে আসে যুগল
গন্তব্য তাদের মনুষ্য কক্ষপথ।
বাদল রাতের আঁধারে ভুল করে সাধের যৌবন,
হারিয়ে যায় ভূগোল নিয়তির জলরঙে!
অতঃপর— তারা গেয়ে চলে হাহাকারের গান
অদৃশ্য বৃত্তের মাঝে মলিন হয় ধূলো
তাদের কোন অবসর নেই।

দু’জন গেয়ে চলে আর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে
মনুষ্য নিরবতায় জাগ্রত হয় পাপ!
বন্ধন অপেক্ষা প্রহর উড়ে যায় বন্দিশালায়।

অবশেষে— মৃত্যুর ফসল মাঠে
শস্যগুলো সব মাঠেই ঝরে যায়।

 

অভ্র

আজও আমি খণ্ডে খণ্ডে ভেঙে যাই
এই অখণ্ড নীলিমায়,
বর্তমানের বুক পকেটে সেই
সোনালি দিনের চিঠি।
আজও জোনাক স্মৃতিগুলো
বিসর্জন শোকে কাতর।

সেদিন অনন্ত মধ্যরাতে
আকাশে মেঘ ছিল না;
তোমার চুম্বনে নদী ফিরে
পেয়েছিল অভ্র।

অন্ধের লাঠি ধরে
আজও আমি হেঁটে বেড়াই
রূপোলি জলের ভেতর।

আজ সেই নিশিকাল
তুমি কেঁদেছিলে—
তাই আকাশও কেঁদেছিল।

 

দ্বৈত-অদ্বৈত

কাউকে তো কাঁদতে হবে
তোমার নয়তো আমার

তোমার হাত আমার হাত ধরলো
যদিও এই প্রথম বার নয়
অপেক্ষায় আছি শেষবার!

শম্ভু অসম্ভূতর লড়াই শেষ হবে
অনাদরে ফুলটা পড়ে থাকবে
প্যাগোডার পথে!

সে আমার ঠোঁট ছোঁবে!
যদিও এই প্রথম বার নয়
অপেক্ষায় আছি, মহাকালের শেষবার।

প্রশান্তির বাগানে ফিরে আসবে আদম
ত্রিংশ শতাব্দীতে—

দ্বৈত-অদ্বৈতের বন্ধ্যা হাওয়ায়
কাউকে তো কাঁদতেই হবে
তোমার নয়তো আমার।

 

মথুরাপুরের সুদর্শনা

বুধবার প্রেমার বন্ধ থাকে—
সে দিন মথুরাপুরের পোলাপানদের
মন খারাপ হয়।
বাজারের নরসুন্দর নিশিকান্ত
শচীনকর্তার গান বাজায়।

পোলাপানরা ডাল ভাঙে
গৃহস্থের গাছ হতে ফল পেড়ে খায়
সন্ধ্যা নামলেই বেনোজলের আশায়
গন্তব্য তাদের ইসলামপুর ঘাট।

বাজারের আধাপাগল রঘু—
হাসিখুশি পান দোকানদার সুজনেরও নাকি কষ্ট হয়।
বুধ যায় বৃহস্পতি আসে, একই ভাবে শুক্র, শনি!
কষ্টরা জড়ো হয় ব্রেণের ঠিক মাঝখানে।

আশ্বিন মাসের প্রথম দিন হলুদ সকালবেলা
নগরকীর্তন দলে তারে আবার দেখা যায়।
সেই দুধে আলতা গায়ের বরণ—
ব্লাউজের ভেতর থেকে ফুলে ওঠা ডৌল।
মুহুর্তেই নড়ে ওঠে মথুরাপুর বাজার।

কাসার ঘণ্টা বাজে
দলধরে পোলাপানরা দাঁড়িয়ে থাকে—
সোনামিয়ার চায়ের দোকানে
সুদর্শনার ভুবনপাগল হাসিতে
বণিকের বেচাকেনা বেড়ে যায়।

 

Error: View 0e2b7795t8 may not exist

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *