নষ্টালজিক এলিজি
পুরনো কাসুন্দির প্রলোভনে আসক্ত হলেও
আর কখনও ফিরবো না
কালো মেঘের পালক ছেঁড়া বিধ্বস্ত নীল আকাশ ছিঁড়ে-ফুঁড়ে
বেরুলেও শুনবো না অর্ন্তজ্বালার করুণ কান্না।
ষড়ঋতুর উষ্ণতায় বিমুগ্ধ হলেও ভিজাবো না
তাতানো এই শরীর…
উত্তপ্ত বুকের দ্রাঘিমা রেখায় অশ্বের পাল চরালেও পিছু হটবো না
ত্রিভূজ কিংবা বীজগণিতের সূত্র ভুলে গেলেও
কর্পূর এর মতো উবে যাব নির্বিঘ্নে।
নস্টালজিক মৌনতায় বুঁদ হয়ে যাওয়া ঘোরের তমসা ভেঙে গেলেও
মহাশুন্যের নৈর্ঋত্যের ডোবায় পড়ে থাকবো
নারী ছেড়া শেকড়ের দীর্ঘশ্বাস
দু’চোখে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিবীণা—
শ্বাসরুদ্ধকর কষ্টের গোঙানিতে জেগে ওঠে
মানবকুলের সভ্যতা, তেজদীপ্ত চেতনা।
কখনও মাতাল হাওয়ায় নারী ছেঁড়া কষ্টের সীমানা ছুঁয়ে
অদৃশ্য আতংকে ধে’য়ে ওঠে ধরিত্রীর নির্মল বাতাস।
বৈরী বাতাসের গভীরতা ভেঙে
ক্রমাগত ঝাপসা চিমনির মতো অস্বচ্ছ আলোয় বেড়ে ওঠে
ঔদার্যময় এক অনুভূতি।
নৈঃস্বর্গের অপরূপ অনুভূতির আলিঙ্গনে মন মাতানো স্বচ্ছ
এক রত্তি মখমল সুখ ঝ’রে পড়ে স্বপ্নপূরীর সমস্ত আঙিনা জুড়ে
বিভাজন, জড়তা উপড়ে ফেলে সঁপে নিই
প্রশান্তির এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস।
স্বপ্নের শিথানে বিপন্নতা
স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নের বেড়াজালে আবদ্ধ—
থমকে গেছে সময়, ঠাস ঠাস করে ভেঙে গেছে বিবেকের দেয়াল।
আগুনের ফুলকিতে রাঙা হয়ে যাওয়া উদ্যমী উচ্চাশাকে দমিয়ে রেখেছি
করাতকলের মতো কেটে যাওয়া নিশ্চিদ্র ভাবনাগুলোকে জিইয়ে রেখেছি
কখনো শীতলতায় কখনো উষ্ণ পরশে নির্ঘুম রাতের স্বপ্ন এঁকেছি
দুর্বিনীত সময়ের ভঙ্গুরতা ভেঙে নিরানন্দ জীবন কাটিয়েছি
আকাশ ভরা জলার্দ্র মেঘের নিরন্তর চলাচল দেখেছি।
কিছু সুখ খুঁজে পাবো এই বিশ্বাসে—
অথচ সব কেমন যেন এলোমেলো, অগোছালো—
বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম অনেককাল; অনেক বছর
যেমন বেঁচে থাকে অসীম সমুদ্র; অনন্ত বাতাস
যেমন বেঁচে থাকে সহস্র বছরের পুরোনো চাঁদ
যেমন বেঁচে থাকে জনপথ; আততায়ি বিকেল
যেমন বেঁচে থাকে অদম্য ইচ্ছের কুচকাওয়াজ
যেমন বেঁচে থাকে এক ঝাঁক রৌদ্রের ঝিলিক
যেমন বেঁচে থাকে নিঃশব্দে ঘুনপোকা
যেমন বেঁচে থাকে নির্জন পথের ছায়া।
অর্ধমৃত ভাবনার জলোচ্ছ্বাস
চার দেওয়ালের সেলে আটকে থাকা নিজের বৈভব
অসহিষ্ণুতার সমস্ত গ্লানি কপোল বেয়ে
প্লাবিত হয় অর্ধমৃত মনের উঠোনে।
প্রাত্যহিক বিত্ত, প্রাচুর্যের অহঙ্কার, নির্বোধ, নির্লজ্জ
উঠকো ঝামেলাগুলোর শেকড় ছড়িয়ে গেছে
ভূবনডাঙ্গার করকমূলে।
প্রাণোচ্ছ্বল মনের ভেতরকার
ওয়ারড্রোব এর অবকাঠামোগুলো ভষ্মিভূত, বিকারগ্রস্থ
ঘুণ পোকার রাজত্বে সয়লাব।
ক্লান্ত-শ্রান্ত, দ্বিধা-দ্বন্দ্বে অনুসৃত ভাবনার
অথৈই জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যাচ্ছি।
অস্তিত্বের কারসাজি
দু’চোখের জল আর বুকের গভীরের চাপা আর্তনাদ
লুকিয়ে রাখার অভিনয় করাটা বড় ট্রাজেডি।
তারপরও মূল কাহিনী, দৃশ্যের প্রেক্ষাপটের কাঁধে ভর করে
চোখ-মুখ বুজে ঘোড়া গাড়ীর মতো কর্কিয়ে কর্কিয়ে পথ চলি
কোন এক সময় মস্তিষ্কের ভেতর শুরু হয় হাতুড় পেটানো শব্দ।
তখন ভুলের মধ্যে দিয়ে একাকী পথ চলি।
নিজেকে ভাসমান খড় কুটোর মতো মনে হয়
নিজেকে রক্ত মাংসের মানব ভাবতে পারি না
নিজেকে সঁপে দিই দুঃখ নদীর অগাধ জলে
নিজেকে প্রতিটি ক্ষণ অগোছালো মনে হয়
নিজেকে নিজের মতো আর ভাবতে পারি না
নিজেকে নিজের আয়নায় দেখতে করুণা হয়
নিজেকে সঁপে দিই দুঃখ নদীর অগাধ জলে
নিজেকে নিজের অস্তিত্বের সাথে যুদ্ধ করি
নিজেকে নিঃশেষ করে দেবার মন্ত্র পড়ি।
জিঘাংসার ছাড়পত্র
দীর্ঘ নিঃশ্বাসের মাত্রা আর বাড়াতে চাই না—
চাই না এক আনা জীবনে সুরের সিম্ফনী টেনে
অদম্য ইচ্ছের নামতা পড়ার।
চৈত্রের দুপুরে পিপাসিত তটিনির বুকের পাঁজরের
আর্তনাদ শুনতে চাই না।
চাই না দীর্ঘ নিঃশ্বাসের মাত্রা আওড়াতে
চাই না বিন্দু বিসর্গের কোন অভিযোগের শুনানী শুনতে
চাই না তিলে তিলে দগ্ধ হওয়া মৃত্যু বিভীষিকার ফাঁদে পড়তে
অতৃপ্তির বাসনা, বঞ্চনা উপেক্ষা করে
অজস্রবার আসতে চেয়েছি একফোঁটা স্বচ্ছ আলোর দ্রাঘিমায়
অথচ জিঘাংসার ছাড়পত্র ছাড়াই ক্রুদ্ধ হীম
আগুনের হলকায় জ্বলছি…
নষ্ট বিবেকের লেদ মেশিন
নষ্ট বিবেকের আলখাল্লা প’রে
সময় ও বাস্তবতার সঙ্গে অবিরাম পাল্লা দিয়ে চলছি।
অথচ আচম্বিত ঘুর্ণিপাকে থেমে যাচ্ছে নিজ গতি
বদলে যাচ্ছে আচার-আচরণ, রীতি-নীতি।
বেমালুম সব ভুলে গিয়ে অলৌকিক ভাবে
জর্জরিত হই কষ্টের লেদ মেশিনে
রাঙতা পোড়া জীবনের তন্দ্রিতে জমে থাকা প্রবাল ছত্রাক
আর জিইয়ে থাকা ভয়ার্ত দানবের অগ্রাসনে
নিস্ক্রিয় হয়ে যায় মনুষ্যত্বের ধারা…।