দোয়েল মোরগ আর কাকদের নিয়ে শিউলির ঝরা দিয়ে শুরু একদিন- ঘাসের কোমল বুকে ঢেউ তুলে নরম সবুজ রোদ চেটে নেয় শিশিরের ঘ্রাণ; মাঠে-মাঠে ফিসফাস বাতাসের- বুকভরা সজীব নিঃশ্বাস; ফুলে ফুলে প্রজাপতি- ফড়িং-ফড়িং-তালে হাতছানি তার হাজার পৃষ্ঠা নিয়ে এমনই গ্রন্থ এক যার অসীম আকাশ নীল প্রচ্ছদে- সবুজ-শ্যামলে মাখা ছায়ারোদ বু’লে যায় আদরের হাত- মেঘে-মেঘে হয়ে যায় আরেকটু বেলা।
ভরাট দুপুর জুড়ে আম জাম নিম- গাছে-গাছে জটলা শালিকের; সাতভায়লার তুমুল আড্ডা একদিকে, অন্যদিকে কাক-ফিঙেদের ঝোড়ো সংলাপ; ঘুঘুর করুণ সুর একটানা তাতে কোনো প্রভাব ফেলে না। তেলাকুচ নোনাফলে সিঁদুরে বুলবুলি- চড়–ই দম্পতি ঘুলঘুলি ঘিরে; ব্যস্ত ভীষণ তারা শ্যাওড়ার ঝোঁপে- পোকামাকড়ের ঘরবসতি ইতিউতি খুঁজে-ফেরা আঁশশ্যাওড়ায় বউ কথা কও হলদে পাখি- ডুমুরের খরখরে ধারালো পাতায় মুখ ঘষে লেজঝোলা; উঠোনে বেগুনডালে অস্থির টুনটুনি; শ্যামার ঘাঘরি নাচ ছিটকি লতায়- তিড়িং বিড়িং তালে ঝরে যায় কালোকুচ ফল; নামাড়ে বরুণ গাছ- বিলধারে হিজলের সার; নিথর দিঘির জলে মাছরাঙা ঝুপ্; দুপুর মাথায় নিয়ে উড়ে আসে বক; টাটকা রূপালি মাছে মগডালে কোরালির ভোঁজ- চিলের তীক্ষèস্বর থেকে থেকে…
এইভাবে শেষ হলে লুকোচুরি খেলা ভাটিরোদ কাশবনে ফুল নয়, শাদামেঘে ঢেকে দেয় অনেকটা নীল; কখনো কাজল বুক কখনো-বা ঘোলা জোয়ার-ভাঁটার নদী চিরদিন ছেঁড়াপালে পাড়ি দেয় হালধরা মাঝি- জীবন উজান তার- চোখ দূর বাঁকে, যেইখানে গাঙচিল- উড়–উড়– স্বপ্ন… অবিরাম ছোটাছুটি- বেলাশেষে ক্লান্ত, অবসন্ন, ঘরফিরতি মানুষের মুখ; অতিথি অসুখ যার দরজায় কড়া নাড়ে আর- ইলেকট্রিকের তারে ঝুলে থাকে বাদুড়ের লাশ…