আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ
নইলে সরকারি লোক, পুলিশ বিভাগে চাকরি করেও
পুলিশী মেজাজ কেন ছিল না ওনার বলুন চলায় ও বলায়?
চেয়ার থেকে ঘরোয়া ধূলো, হারিকেনের চিমনীগুলো মুছে ফেলার মতন তিনি
আস্তে কেন চাকর বাকর এই আমাদের প্রভু নফর সম্পর্কটা সরিয়ে দিতেন?
থানার যত পেশাধারী, পুলিশ সেপাই অধীনস্থ কনস্টেবল
সবার তিনি একবয়সী এমনভাবে তাস দাবাতেন সারা বিকেল।

মায়ের সঙ্গে ব্যবহারটা ছিল যেমন ব্যর্থপ্রেমিক
কৃপা ভিক্ষা নিতে এসেছে নারীর কাছে।

আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ
নইলে দেশে তাঁর ভাইয়েরা জমিজমার হিশেব কষছে লাভ অলাভের
ব্যক্তিগত স্বার্থ সবার আদায় করে নিচ্ছে সবাই
বাবা তখন উপার্জিত সবুজ ছিপের সুতো পেঁচিয়ে মাকে বলছেন, এই দ্যাখোতো
জলের রং এর সাথে এবার এই সুতোটা খাপ খাবে না?

আমি যখন মায়ের মুখে লজ্জা ব্রীড়া, ঘুমের ক্রীড়া
ইত্যাদিতে মিশেছিলুম, বাবা তখন কাব্যি করতে কম করেননি মাকে নিয়ে
শুনেছি শাদা চামেলী নাকি চাপা এনে পরিয়ে দিতেন রাত্রিবেলা মায়ের খোঁপায়।

মা বোলতেন বাবাকে তুমি এই সমস্ত লোক দ্যাখো না?
ঘুষ খাচ্ছে, জমি কিনছে, শনৈঃ শনৈঃ উপরে উঠছে,
কত রকম ফন্দি আটছে কত রকম সুখে থাকছে,
তুমি এসব লোক দ্যাখো না?

বাবা তখন হাতের বোনা চাদর গায়ে বেরিয়ে কোথায়
কবি গানের আসরে যেতেন মাঝরাত্তিরে
লোকের ভীড়ে সামান্য লোক, শিশিরগুলি চোখে মাখতেন।

এখন তিনি পরাজিত, কেউ দ্যাখে না একলা মানুষ
চিলেকোঠার মতোন তিনি আকাশ দ্যাখেন, বাতাস দ্যাখেন
জীর্ণ শীর্ণ ব্যর্থ চিবুক বিষণ্ণলাল রক্তে ভাবুক রোদন আসে,
হঠাৎ বাবা কিসের ত্রাসে দু’চোখ ভাসান তিনিই জানেন।

একটি ছেলে ঘুরে বেড়ায় কবির মতো কুখ্যাত সব পাড়ায় পাড়ায়
আর ছেলেরা সবাই যে যার স্বার্থ নিয়ে সরে দাঁড়ায়
বাবা একলা শিরদাঁড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন, কী যে ভাবেন,
প্রায়ই তিনি রাত্রি জাগেন, বসে থাকেন চেয়ার নিয়ে

চামেলী হাতে ব্যর্থ মানুষ, নিম্নমানের মানুষ।

 

Error: View 8ab5c96kgm may not exist

আপনি যদি কবিতার আকাশে লিখতে চান তাহলে রেজিস্ট্রেশন করুন

 

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *